বাচ্চার সুস্বাস্থ্যে গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা কেমন হলে ভালো
একটি নারীর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হল তার গর্ভাবস্তার সময়। সুস্থ সবল বাচ্চা জন্মগ্রহনের জন্য এই সময় সুস্থ চলাফেরা করতে হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রাত্যহিক খাদ্যাভাস। পুষ্টিকর ও সুষম খাবার গ্রহণ।
গর্ভবতী মায়ের খাবারের তালিকা এমন হওয়া উচিত যাতে গর্ভের শিশুর সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশ নিশ্চিত হয় এবং পাশাপাশি মা সুস্থ ও শক্তিশালী থাকে। নিচে বাচ্চার সুস্বাস্থ্যে গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা উল্লেখ্য করা হলো।
পেজ সূচিপত্রঃ বাচ্চার সুস্বাস্থ্যে গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
- বাচ্চার সুস্বাস্থ্যে গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
- গর্ভাবস্তায় মায়েদের প্রধান ৩টি খাবার কি কি
- কোন মাসে কতটুকু খাবার খাওয়া উচিত গর্ভবতী মায়ের
- প্রথম ১ থেকে ৩ মাস খাবারের তালিকা
- গর্ভবতী মায়ের ৪ থেকে ৯ মাসের খাবার তালিকা
- গর্ভাবস্তায় কোন কোন খাবারগুলো খাওয়া যাবেনা
- শাক-সবজি বেশি খেলে ভালো না কম?
- গর্ভবতী মায়েদের সুষম খাবারের তালিকা
- গর্ভাবস্তায় পুষ্টি চাহিদা কেমন থাকে এবং খাবার তালিকা
- যেভাবে চলাফেরা বা কাজ করলে বাচ্চার ক্ষতি হবে
- সুস্থসবল বাচ্চার উচ্চতা ও ওজন কেমন হওয়া ভালো
বাচ্চার সুস্বাস্থ্যে গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
বাচ্চার সুস্থ সবল ভাবে বেড়ে ওঠার জন্য গর্ভবতী মায়ের খাবারের তালিকা সুষম ও
পুষ্টিকর হওয়াটা খুবই জরুরি। প্রতিদিন গর্ভবতী মায়ের খাবারের তালিকায় শর্করা
ও শক্তিদায়ক খাবার রাখা উচিত। যেমন
ভাত রুটি, আলু-মিষ্টি-কুমড়া-মিষ্টি আলু-ওঠ-সুজি-কনফ্লেক্স। শর্করা ও শক্তি দেয় খাবারের পাশাপাশি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার রাখা খুবই
জরুরি। যেমন ডিম মাছ মুরগি, গরুর মাংস ডাল মসুর ডাল দুধ ও দই সয়াবিন ছোলা মোটর। এ খাবার গুলোর ভেতরে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে যা একজন গর্ভ হতে মায়ের
জন্য খুবই জরুরী।
বেশি বেশি শাকসবজি খাওয়া উচিত কারণ শাকসবজিতে থাকে আয়রন ও ফাইবার। আয়রন ও
ফাইবার সমৃদ্ধ কিছু খাবার হলো পালং শাক ,লাল শাক কলমি শাক গাজর লাউ পেঁপে
ফুলকপি বাঁধাকপি বেগুন করোলা। ভিটামিন ও খনিজ উৎপাদনের উৎস ফলমূল। প্রত্যেকদিন
খাবারের তালিকায় ফলমূল রাখা উচিত যেমন
কলা আপেল কমলা পেয়ারা আম আঙ্গুর কাঁঠাল লেবু আনারস বেদানা খেজুর ও কিসমিস
এর মত কিছু খাবার। একজন গর্ভবতী মায়ের সবচাইতে জরুরি যে এই জিনিস তা হল প্রচুর পরিমাণে পানি
পান করা। কমপক্ষে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।
গর্ভাবস্তায় মায়েদের প্রধান ৩টি খাবার কি কি
গর্ভবতী মায়েদের জন্য প্রতিদিনকার খাবার তালিকায় কিছু নির্দিষ্ট খাবার রাখা
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ শিশুর শারীরিক মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করে। গর্ভাবস্তায় মায়েদের প্রধান তিনটি খাবারের মধ্যে একটি হলো
ডিম। ডিমে উচ্চমানের প্রোটিন কোলিন ভিটামিন ডি ও ভিটামিন-১২ সরবরাহ করে। যা
শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশের সাহায্য করে। কম করে হলেও
প্রত্যেকদিন একটি করে ডিম খাওয়া উত্তম।
নাম্বারঃ২ঃ দই দুধ ও দুধ চা জাতীয় খাবার। দুধ ও দুধ যাত খাবারে প্রচুর
পরিমাণে ক্যালসিয়াম প্রোটিন ও ভিটামিন ডি থাকে। শিশুর হাড় ও দাঁতের গঠন এবং
মায়ের হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় দুধ ও দুধ
জাতীয় খাবার অবশ্যই খেতেই হবে।
নাম্বারঃ৩ঃ ফল ও শাকসবজি। ফল ও শাকসবজি আয়রন ফোলেট ফাইবার ও
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে। গর্ভকালীন কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে এবং
রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সাহায্য করে। গর্ভকালীন সবচাইতে বড় সমস্যা হচ্ছে
রক্তশূন্যতা। এ রক্তশূন্যতার প্রভাব মা এবং শিশু দুজনের ওপরে পড়তে পারে তাই
শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে গারো রঙের শাকসবজি ও ফল
খাওয়া উত্তম।
কোন মাসে কতটুকু খাবার খাওয়া উচিত গর্ভবতী মায়ের
গর্ভধারণের প্রথম এক থেকে তিন মাস হলো শিশুর মস্তিষ্ক স্পাইন ও অন্যান্য
গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ গঠনের সময়। এর সময় মায়ের শরীরের হরমোনের বড় পরিবর্তন
হয় অনেক সময় খূদা মন্দ থাকে। তাই পুষ্টিকর খাবার দেওয়াটা খুবই জরুরী এই এক
থেকে তিন মাসের মধ্যে। তাই এই এক থেকে তিন মাস পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করাটা
অত্যন্ত জরুরী।
সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে যেসব খাবার খেতে পারে। এক গ্লাস গরম পানি ও এক
থেকে দুইটি খেজুর বা কিসমিস চাইলে একটা কল আবার বিস্কুট খেতে পারেন।
অস্বাস্থ্যকর ও অপুষ্টিকর খাবার খেয়ে নিজের ক্ষতি করা যাবে না। এই সময় অনেক
সচেতন ভাবে চলাফেরা ও খাবার গ্রহণ করতে হবে।
সকালের নাস্তা আটটা থেকে নয়টার মধ্যে সারতে হবে। নাস্তা তালিকায় থাকা
উত্তম একটি সিদ্ধ ডিম এক গ্লাস গরম দুধ অথবা ওডস সবজি খিচুড়ি সবজি রুটি।
সঙ্গে একটা মৌসুমী ফল রাখা ভালো যেমন কলা পেয়ারা বা আপেল। আপেল খেতে হবে
এরকম না পেয়ারা বা কলা খেলেও হবে।
চার থেকে নয় মাসের মধ্যে যেসব খাওয়ানো উচিত তাহলো প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার।
শিশুর মাংসপেশি ও কোষের গঠনের জন্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। মূলত সিদ্ধ ডিম মাছ মুরগি গরুর মাংস ডাল ছোলা সয়াবিন দুধ ও দই
এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়। কম করে হলেও প্রতিদিন একটি করে
সিদ্ধ ডিম খেতে হবে মাছ মাঝে মধ্যে খেলেও চলবে মুরগি ও গরুর মাংস সেদ্ধ বা কম
তেলে রান্না করে খেতে হব। ডাল সলা সয়াবিন দিতে হবে নিয়মিত। প্রত্যেকদিন এক
গ্লাস করে দুধ অন্তত খাওয়া উচিত।
চার থেকে নয় মাসের মধ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার উপাদান হল আয়রন ও
ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার। রক্তশূন্যতার রোধ ও হাড় মজবুত করতে আয়রন ও
ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবারের জুড়ি নেই। পালং কলমি লাল শাক খেজুর কিসমিস
কলিজা দুধ দই ছানা এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ক্যালসিয়াম আছে।ভিটামিন ও
খনিজ যুক্ত ফল যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও সুস্থতা নিশ্চিত করে। শর্করা ও শক্তি
দায়ক খাবার।
প্রথম ১ থেকে ৩ মাস খাবারের তালিকা
গর্ভধারণের প্রথম এক থেকে তিন মাস হলো শিশুর মস্তিষ্ক স্পাইন ও অন্যান্য
গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ গঠনের সময়। এর সময় মায়ের শরীরের হরমোনের বড় পরিবর্তন
হয় অনেক সময় খূদা মন্দ থাকে। তাই পুষ্টিকর খাবার দেওয়াটা খুবই জরুরী এই
এক থেকে তিন মাসের মধ্যে। তাই এই এক থেকে তিন মাস পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত
করাটা অত্যন্ত জরুরী।
সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে যেসব খাবার খেতে পারে। এক গ্লাস গরম পানি ও
এক থেকে দুইটি খেজুর বা কিসমিস চাইলে একটা কল আবার বিস্কুট খেতে পারেন।
অস্বাস্থ্যকর ও অপুষ্টিকর খাবার খেয়ে নিজের ক্ষতি করা যাবে না। এই সময়
অনেক সচেতন ভাবে চলাফেরা ও খাবার গ্রহণ করতে হবে।
সকালের নাস্তা আটটা থেকে নয়টার মধ্যে সারতে হবে। নাস্তা তালিকায়
থাকা উত্তম একটি সিদ্ধ ডিম এক গ্লাস গরম দুধ অথবা ওডস সবজি খিচুড়ি সবজি
রুটি। সঙ্গে একটা মৌসুমী ফল রাখা ভালো যেমন কলা পেয়ারা বা আপেল। আপেল খেতে
হবে এরকম না পেয়ারা বা কলা খেলেও হবে
গর্ভবতী মায়ের ৪ থেকে ৯ মাসের খাবার তালিকা
গর্ভাবস্থায় চার থেকে নয় মাস হল গর্ভস্থ শিশুর শরীরের পূর্ণতা লাভ করে
হাড়ের গঠন তৈরি হয় এবং ওজন বাড়ায় ও জন্মের প্রস্তুতির সময় হয়ে যায়। এ
সময় মায়ের শরীরের বাড়তি শক্তি প্রয়োজন হয় বাচ্চা প্রসব করার সময় শক্তি
অনেক বেশি প্রয়োজন হয় তাই আগে থেকেই সুষম ও পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার দেওয়া
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চার থেকে নয় মাসের মধ্যে যেসব খাওয়ানো উচিত তাহলো প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার।
শিশুর মাংসপেশি ও কোষের গঠনের জন্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। মূলত সিদ্ধ ডিম মাছ মুরগি গরুর মাংস ডাল ছোলা সয়াবিন দুধ ও দই
এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়। কম করে হলেও প্রতিদিন একটি করে
সিদ্ধ ডিম খেতে হবে মাছ মাঝে মধ্যে খেলেও চলবে মুরগি ও গরুর মাংস সেদ্ধ বা কম
তেলে রান্না করে খেতে হব। ডাল সলা সয়াবিন দিতে হবে নিয়মিত। প্রত্যেকদিন এক
গ্লাস করে দুধ অন্তত খাওয়া উচিত।
চার থেকে নয় মাসের মধ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার উপাদান হল আয়রন ও
ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার। রক্তশূন্যতার রোধ ও হাড় মজবুত করতে আয়রন ও
ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবারের জুড়ি নেই। পালং কলমি লাল শাক খেজুর কিসমিস
কলিজা দুধ দই ছানা এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ক্যালসিয়াম
আছে।
ভিটামিন ও খনিজ যুক্ত ফল যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও সুস্থতা নিশ্চিত করে।
বাচ্চা জন্মগ্রহণের পর তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও তার সুস্থতা অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। কমলা পেয়ারা আনারস বেদনা আপেল কলা আম পেঁপে আমলকি লেবুর রস
এগুলোতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন খনিজ উপাদান রয়েছে। যা শিশুর রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সুস্থ সবল ভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে।
শর্করা ও শক্তি দায়ক খাবার। ভাত রুটি আলু মিষ্টি-আলু সুজি খিচুড়ি সেমাই
এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে শর্করা ও শক্তি যোগায়। বাচ্চা সুস্থ ভাবে বেড়ে ওঠার
জন্য ও জন্মগ্রহণের জন্য মা ও বাচ্চার শক্তি ও ওজনের দিকটা অবশ্যই
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।মস্তিষ্ক গঠনের জন্য ভালো সহায়ক ও চর্বি ও
বাদাম জাতীয় খাবার। চীনা বাদাম আখরোট কাঠবাদাম অলিভ অয়েল সরিষার তেল ঘি
এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে চর্বি রয়েছে। সুস্থ মস্তিষ্ক গঠনে চর্বি ও বাদাম
জাতীয় খাবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বাচ্চা সুস্থ ভাবে প্রসব করানোর জন্য পানি থাকাটা অত্যন্ত জরুরি হয়ে থাকে।
পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি থাকলে বাচ্চার নরমাল ডেলিভারি করাতে কোন রকম সমস্যা হয়
না খুব সহজেই হয়ে যায়। তাই প্রতিদিন অন্তত ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি খাওয়া
উচিত মাঝেমধ্যে নারিকেলের পানি লেবুর শরবত ও ফলের রস খাওয়া উত্তম।
গর্ভাবস্তায় কোন কোন খাবারগুলো খাওয়া যাবেনা
সুস্থ বাচ্চা জন্মগ্রহণের জন্য মাকে সুস্থ থাকা টাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
কারণ মা সুস্থ না থাকলে বাচ্চা সুস্থ থাকবে না। মা ও শিশুকে সুস্থ রাখার জন্য
যেমন পুষ্টিকর খাবার দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আবার কিছু খাবার মেনে চলা ও
দরকার। যেসব খাবার খেলে বাচ্চা ও মায়ের ক্ষতি হতে পারে সেসব খাবার খাওয়া
যাবে না। যেমন কাচা বা অধা সেদ্ধ মাংস ডিম দুধ অতিরিক্ত মসলা ও তেলযুক্ত
খাবার বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর বাহিরের ফুটপাতের খাবার ও প্যাকেট খাবার
অতিরিক্ত ক্যাফিন মানে চা বা কফি এগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে বিভিন্ন
রকমের কোলড্রিংস বা সফড্রিংস এবং কাঁচা পেপে খাওয়ার থেকে দূরে থাকতে
হবে।
শাক-সবজি বেশি খেলে ভালো না কম?
গর্ভবতী মায়েদের জন্য শাকসবজি বেশি খাওয়া ভালো তবে অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ
করলে ক্ষতিও হতে পারে। পরিমাণের ভারসাম্য বজায় রেখে শাকসবজি খাওয়া উচিত।
শাকসবজি বেশি খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি। আয়রন সরবরাহ করে এ ধরনের শাকসবজি
খেতে হবে যেমন পালং শাক কলমি শাক এগুলো রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে অত্যাধিক
কার্যক্রম। ফোলেট বা ফলিক এসিডে ভরপুর শাকসবজি খেতে হবে।
শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র গঠনের সহায়ক খাবার যেমন মেথি শাক লাল শাক
ব্রকলি। ফাইবার বেশি আছে এরকম ধরনের শাকসবজি খাওয়া উচিত কারণ এসব শাক-সবজিতে
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং হজমে সহায়তা করে যেমন মিষ্টি কুমড়া করলা লাউ।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বা ভিটামিনের ভরপুর শাকসবজি খেতে হবে কারণ রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বাড়ায় ও ত্বকের ও চোখের জন্য ভালো।
তবে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে অতিরিক্ত তিতা বা ঝাঁঝালো বা কাচা শাক-সবজি
খাবেন না। খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধুয়ে ও সেদ্ধ করে রান্না করে খেতে হবে যেন
বিষাক্ত কীটনাশক থাকতে না পারে। পেঁপে করলা ইত্যাদি কিছু শাকসবজি গর্ভের
শুরুর দিকে পরিহার করা ভালো।
প্রতিদিন অন্তত দুই থেকে তিন ধরনের সবজি এবং এক থেকে দুই ধরনের শাক খাওয়া
উচিত। পরিমাণে এক থেকে দুই কাপ মত। সুষম খাবারের শাকসবজি থাকা চাই তবে
শুধু শাকসবজি খেলে চলবে না এর সাথে প্রোটিন ও চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া
প্রয়োজন। হ্যাঁ, সবজি বেশি খাওয়া ভালো তবে একসঙ্গে অনেক বেশি না খেয়ে সুষম
খাবারের অংশ হিসেবে খাওয়াটা সবচেয়ে উপকারী।
গর্ভবতী মায়েদের সুষম খাবারের তালিকা
মা ও শিশুর সুষম খাবারের তালিকা এমন ভাবে তৈরি করতে হবে যাতে উভয়ের পুষ্টির
চাহিদা পূরণ হয় এবং সুস্থ সবল ভাবে বেড়ে উঠতে পারে।
সকালের খাবারঃ এক গ্লাস গরম পানি ও দুইটি খেজুর বা কিসমিস অথবা কলা বা আপেল
একটি।
সকালের নাস্তাঃ ১.একটি সিদ্ধ ডিম প্লাস এক কাপ দুধ অথবা ওটস বা সুজি, কলা বা
২.খেজুর আবার সবজি খিচুড়ি সাথে দই এই কম্বিনেশন এর মধ্যে যেকোনো একটি খেতেই
হবে তবে একটি মৌসুমী ফল রাখতে হবে যেমন কমলা পেয়ারা বা বেদেনা।
দুপুরের খাবারঃ ভাত বা রুটি, মাঝারি পরিমানে একটি ডাল মুখ মশুর ছোলা হলে ভালো
সবজি এক থেকে দুই পদের পালং লাউ গাজর সিম এগুলো হলে উত্তম এক টুকরো মাছ বা
মুরগির মাংস সালাত এক গ্লাস পানি।
বিকেলের নাস্তাঃ ছোলা ভুনা বা দুইটি বিস্কুট প্লাস এক কাপ দুধ কম দুধের চা
সঙ্গে এক টুকরো ফল যেমন আপেল বা বেদানা।
রাতের নাস্তাঃ এক থেকে দুইটি রুটি বা হালকা ভাত এক টুকরো মাছ বা মুরগি আর এক
কাপ দই।
কিছু সুষম খাবারের তালিকাঃ
পুষ্টি উপাদান | উৎস | উপকারিতা |
---|---|---|
প্রোটিন | ডিম, মাছ, মাংস, দুধ, ডাল | শিশুর কোষ গঠন |
ফোলিক অ্যাসিড | পালং শাক, কলিজা, কলা | নিউরাল টিউব ডিফেক্ট প্রতিরোধ |
আয়রন | লাল শাক, কলিজা, খেজুর, কলা | রক্ত তৈরি |
ক্যালসিয়াম | দুধ, দই, ছানা, শাক | হাড় গঠন |
ভিটামিন সি | লেবু, কমলা, পেয়ারা | আয়রন শোষণে সহায়তা |
ফাইবার | শাকসবজি, ফল, ওটস | কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ |
গর্ভাবস্তায় পুষ্টি চাহিদা কেমন থাকে এবং খাবার তালিকা
গর্ভাবস্তায় খাবারের চাহিদা সাধারন সময়ের চাইতে বেশি দিতে হয়। কারণ এই সময়
মায়ের পাশাপাশি তার ভিতরে শিশুর বৃদ্ধি ঘটে। আর এই গর্বের শিশুর সঠিক বৃদ্ধির
জন্য অতিরিক্ত পুষ্টির প্রয়োজন। পুষ্টিকর খাবার গুলোর মধ্যে প্রোটিন যুক্ত
খাবার ফলমূল শাক-সবজি শর্করাযুক্ত খাবার চর্বিযুক্ত খাবার দুধ ও দুধজাত খাবার
দিতে হবে।
ডিম মাছ মুরগির মাংস ডাল সয়াবিন দুধ এগুলো প্রোটিনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। আম
কলা আপেল কমলা পেয়ারা খাওয়া খুবই দরকার। পালং শাক মিষ্টি কুমড়া গাজর
বাঁধাকপি এ ধরনের শাকসবজি খাওয়া উত্তম। ভাত রুটি আলু উডস এগুলো শর্করা
চাহিদা পূরণ করে থাকে। চর্বিযুক্ত খাবার খেতে হবে যেমন বাদাম তেল বা ঘি সাথে
দুধ ও দুগ্ধ জাত খাবার রাখতে হবে যেমন দুধ দই ছানা।
নিচে পুষ্টি চাহিদা পূরণের একটি চার্ট দেওয়া হলঃ
পুষ্টি উপাদান | দৈনিক চাহিদা | উপকারিতা |
---|---|---|
প্রোটিন | ৭০–৮৫ গ্রাম | শিশুর কোষ, পেশি, হরমোন তৈরি |
ফোলিক অ্যাসিড | ৪০০–৬০০ মাইক্রোগ্রাম | নিউরাল টিউব গঠন, জন্মদোষ রোধ |
আয়রন | ২৭ মিলিগ্রাম | রক্ত তৈরি, রক্তশূন্যতা রোধ |
ক্যালসিয়াম | ১,০০০ মিলিগ্রাম | হাড়, দাঁত গঠন |
ভিটামিন ডি | ৬০০ IU | ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তা |
ফাইবার | ২৫–৩০ গ্রাম | হজমে সাহায্য, কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ |
শক্তি | ২,২০০–২,৫০০ ক্যালোরি | শিশু ও মায়ের শক্তির যোগান |
যেভাবে চলাফেরা বা কাজ করলে বাচ্চার ক্ষতি হবে
গর্ভাবস্থায় শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য।।এই সময় এমন
কিছু কাজ করা যাবে না বা এমন ভাবে চলাফেরা করা যাবে না যাতে বাচ্চার ক্ষতি
হয় এবং বাচ্চা সঠিক বিকাশে ও বৃদ্ধিতে বাধা পায়। কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ
যেমনঃ
১.দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা বা বসে থাকা
২.কোন কিছুর সাথে ধাক্কা লাগা বা পড়ে যাওয়া
৩.মাটি বা রাসায়নিক দ্রব্য পরিষ্কার করা
৪.ধূমপান ও নেশা জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করা
৫.দ্রুত দৌড়ানো বা ঝুঁকিপূর্ণ ব্যায়াম করা
৬.কঠিন মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা
৭.ভুল ঘুমানোর সঙ্গী পিঠের ওপর শোয়া।
৮.ভারী জিনিস তোলা হঠাৎ কিছু তুললে কোমর ও পেটে চাপ লাগতে পারে বাচ্চার ক্ষতি
হতে পারে।
ওপরে বর্ণিত সকল কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন। যতটুক প্রয়োজন
ততটুকু করুন বাকিগুলো এড়িয়ে চলুন।
সুস্থসবল বাচ্চার উচ্চতা ও ওজন কেমন হওয়া ভালো
একটি শিশু যখন জন্মগ্রহণ করে সাধারণভাবে তার জন্মের সময় উচ্চতা ওজনের একটি
গড় মাত্রা থাকে। এটি বিভিন্ন শিশুর বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। এই পার্থক্যের
কারণ হয় শিশুর জেনেটিক্স মায়ের পুষ্টি ও গর্ভকালীন যত্ন অনুযায়ী। সুস্থ সবল
ছেলে নবজাতকের ওজন ২.৮ থেকে ৪.২ কেজিও অর্থাৎ গড় ৩.৩ কেজি। উচ্চতা ৪৮ থেকে
৫৩ সেন্টিমিটার গড় ৫০ সেন্টিমিটার। মেয়ে নবজাতকের ক্ষেত্রে ২.৭ থেকে
৪.০ কেজি গড় ৩.২ কেজি। উচ্চতা ৪৭ থেকে ৫২ সেন্টিমিটার গড় ৪৯
সেন্টিমিটার।
তবে কিছু শিশু অপুষ্টিকর ভাবে জন্মগ্রহন করে যার লক্ষনগুলো হলো,
বাচ্চার ওজন ২.৫ কেজির নিচে হয়। গর্ভকালীন সময় ৩৭ সপ্তাহের কম হয়। বাচ্চা
জন্মের পর তার গায়ের কালার নিলচে ভাব ও দুর্বল কান্না দেখা দেয়।
বিশ্বাস নিতে সমস্যা হয়।
লেখকের মন্তব্যঃ
উপরের আর্টিকেলটি মূলত গর্ভবতী মা সম্পর্কে লেখা হয়েছে। উপরের
আর্টিকেলে এক মাস থেকে শুরু করে নয় মাস অর্থাৎ বাচ্চা হওয়া পর্যন্ত কি
ধরনের খাবার কি ধরনের চলাফেরা কি ধরনের পরিচর্যা নিতে হবে সবকিছু তুলে ধরা
হয়েছে। আপনি যদি পোস্টটি সম্পূর্ণভাবে পড়েন তাহলে একটি সুস্থ বাচ্চা
জন্মগ্রহণের জন্য সব ধরনের খাদ্যের তালিকা এবং চলার পরিবেশ সবকিছু পেয়ে
যাবেন। আর আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে এই
পোস্টটি আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।
মোঃ ফাইসাল আহমেদ
Ronginpata.com সাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।
comment url