স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি ও মৌসুম বাংলাদেশ ২০২৫
স্ট্রবেরি খুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। বাংলাদেশে এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই
চলেছে। স্ট্রবেরি শীতপ্রধান দেশের ফল কিন্তু বাংলাদেশের মাটির গুনাগুন ও আধুনিক
কৃষির বিস্তারে এর চাষ এখন বাংলাদেশেও সম্ভব।
বাংলাদেশে স্ট্রবেরি চাষ এখন একটি লাভজনক কৃষি উদ্যোগ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
স্ট্রবেরি বিদেশি ফল হলেও এখন বাংলাদেশে চাষ হচ্ছে। স্বাবলম্বী হওয়ার নতুন দুয়ার
খুলে দিয়েছে বাংলাদেশে স্ট্রবেরি চাষ।
পেজ সুচিপত্রঃ স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি ও মৌসুম বাংলাদেশ
- স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি ও মৌসুম বাংলাদেশ ২০২৫
- বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত স্ট্রবেরি জাত
- স্ট্রবেরি চাষের সঠিক সময় ও জলবায়ু
- উপযুক্ত মাটি ও মাটি প্রস্তুত প্রণালি
- সঠিক ও নিদিষ্ট পরিমানে সার প্রয়োগ
- চারা রোপণের সঠিক নিময় ও সময়
- কতদিন পর পর সেচ দিতে হবে
- রানার/লতার ব্যবস্থাপনা ও পরিচর্যা
- স্ট্রবেরি গাছের রোগ-বালাই ও প্রতিকার
- অন্যান্য রকমের পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনা
- ফল ও চারা সংগ্রহের সঠিক উপায়
- স্ট্রবেরি চাষের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি ও মৌসুম বাংলাদেশ ২০২৫
স্ট্রবেরি জনপ্রিয়তা বাংলাদেশে দিন দিন বেড়েই চলে। এর অনন্য স্বাদ ও রুপময় বৈচিত্রের জন্য এর চাহিদা অনেক বেশি। আবার পুষ্টিগুণে ভরপুর। বর্তমানে স্ট্রবেরি চাষ একটি লাভজনক উদ্যোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর কারণ হলো বাজার মূল্য এবং ক্রেতাদের উচ্চ চাহিদা। ১ কেজি স্ট্রবেরি বিক্রি হয় সর্বনিম্ন ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা যা অন্যান্য ফলের তুলনায় তুলনামূলক লাভজনক।স্ট্রবেরি চাষের ভালো একটি দিক হলো এটি কম জমিতে অধিক মুনাফা দেয়।
সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে বিঘা প্রতি কম করেও ৮০০ থেকে ১০০০ কেজি ফল উৎপাদন করা সম্ভব। খরচের তুলনায় এর লাভের অংকটা অনেক বেশি তাই তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশে এই ফল চাষের চাহিদা অনেক বেড়ে গিয়েছে। স্ট্রবেরি মূলত শীতকালীন ফল, এটি অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ভালো ফল দেয় এবং চাষ করার উপযুক্ত সময়। এবং জানুয়ারি থেকে মার্চ চারা রোপণে ৬০-৭৫ দিনের মধ্যে ফল ধরতে শুরু করে।
বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত স্ট্রবেরি জাত
বাংলাদেশের প্রায় পঁচিশ টি জেলায় সাফল্যের সাথে স্ট্রবেরি চাষ করা হচ্ছে। আকর্ষণীয় বর্ণ গন্ধ স্বাদ ও উচ্চপুষ্টিমানের জন্য স্ট্রবেরি অত্যন্ত চাহিদা সম্পন্ন একটি ফলে রূপান্তরিত হয়েছে। বিশেষ করে বগুড়ার রংপুর সিলেট চট্টগ্রাম এবং মধুপুর অঞ্চলের স্ট্রবেরী চাষের ভালো ফলন দেখা গিয়েছে। বাংলাদেশের সবচাইতে জনপ্রিয় জাত হচ্ছে ফেস্টিভাল(Festival)।
ফেস্টিভাল(Festival): জাতের ফল মাঝারি আকারের গারো লাল ও মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকে এবং ফলনের বেশ ভালো প্রত্যেকটি গাছের প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম পর্যন্ত ফলন দেয়। তুলনামূলক বাজারে ফেস্টিভাল(Festival) জাতের স্ট্রবেরি চাহিদা অনেক বেশি।
সুইট চার্লি(Sweet Charlie): এই জাতের ফল কিছুটা ছোট তবে খুবই মিষ্টি ও সুগন্ধযুক্ত। সুইট চার্লি(Sweet Charlie) জাতের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও ভালো এবং ফলন মাঝারি।
কেমারোসা(Camarosa) এ জাতের ফল বড় গাড়ো লাল এবং টেকসই, রপ্তানিযোগ বাণিজ্যিক চাষের জন্য উপযোগী একটি জাত। কেমারোসা(Camarosa) জাতের ফল সংরক্ষণের টিকে থাকে দীর্ঘদিন।
উইন্টার ড্রান(Winter Dawn) এই জাতের ফল একটু আগে ফলন দেয়। বাংলাদেশের শীতকাল সঠিক সময় এটি চাষের জন্য। হালকা ও মৃদু রোদে চাষ করলে ফলন ভালো হয়।
বারি স্ট্রবেরি ওয়ান(BARI Straberry-1) উপরের চারটি জাত মূলত বিদেশী জাত কিন্তু বারি স্ট্রবেরি ওয়ান বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত একটি জাত। বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী, এর স্বাদ-মিষ্টি মাঝারি আকারের। ফলন দেওয়ার সময় জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে। আপনি নতুন উদ্যক্তা হয়ে থাকলে শুরুতে ফেস্টিভাল বা সুইট ক্যারোলি জাত নির্বাচন করে চাষ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।
স্ট্রবেরি চাষের সঠিক সময় ও জলবায়ু
স্ট্রবেরির গুণগত মান ও সাদের জন্য এটি বাংলাদেশ এখন জনপ্রিয় একটি ফল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্রেতাদের যেমন পছন্দ তেমন এটি চাষে লাভের অংক ও অনেক বেশি। তাই স্ট্রবেরি চাষের চাহিদা বাংলাদেশে দিন দিন বেড়েই চলছে। স্ট্রবেরি মূলত শীতকালীন ফল। এটি শীতের মৌসুমে চাষ করতে হয়। স্ট্রবেরি চারা রোপনের সঠিক সময় হচ্ছে অক্টোবরের শেষ থেকে ডিসেম্বরের শুরুর দিকে। ফুল আসা শুরু করে ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ।
ফল সংগ্রহের উপযুক্ত সময় হচ্ছে জানুয়ারি থেকে মার্চ। তাহলে বোঝা যাচ্ছে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর হল স্ট্রবেরি চাষের উপযুক্ত সময়। কারণ এই সময় আবহাওয়ার তুলনামূলক ঠান্ডা থাকে ঠান্ডা আবহাওয়া স্ট্রবেরি গাছের বৃদ্ধির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।স্ট্রবেরি ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে চাষ করলে ভালো ফলন দেয়।
স্ট্রবেরি গাছের বৃদ্ধির জন্য প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ ঘন্টা সূর্যালোকের প্রয়োজন। হালকা বাতাস থাকলে কোন ক্ষতি নেই তবে ঝড় বা অতিরিক্ত কুয়াশায় ক্ষতি হতে পারে। অতিরিক্ত গরমে স্ট্রবেরি গাছ ফলন দেয় না বা ফল ছোট হয়ে যায় বৃষ্টিতে গাছ পচে নষ্ট হয়ে যায় এবং বেশি কুয়াশায় ছত্রাকের আগমন বেশি দেখা দেয়।
উপযুক্ত মাটি ও মাটি প্রস্তুত প্রণালি
স্ট্রবেরি চাষের ভালো ও তুলনামূলক ফলন পাওয়ার জন্য আগে মাটি প্রস্তুত করতে হবে ভালোভাবে। স্ট্রবেরি চারা রোপনের আগে জমিতে ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুর-ঝুরা করে নিতে হবে। কমপক্ষে ৩০ সেন্টিমিটার গভীর করে জমি চাষ করতে হবে। স্ট্রবেরি চারা রোপনের জন্য বেড তৈরি করতে হয় যার প্রস্থ প্রায় ৩ ফুট।
স্ট্রবেরি চাষের জন্য দো-আঁশ ও বেলে-দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে ভালো।অধিক ফলন পাওয়ার জন্য মাটির PH ৫.৫ থেকে ৬.৫ এর মধ্যে রাখতে হবে। ভালোমতো পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে নইলে পানির চাপে গাছের শিকড় পচে যেতে পারে। জমি ভালোভাবে পরিষ্কার ও বিভিন্ন ধরনের আগাছা মুক্ত করতে হবে।
বেডের উচ্চতা সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার এবং প্রস্থ ১ থেকে ১.৫ ফুট রাখতে হবে। বেডের দূরত্ব ২০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার এবং এক শারি থেকে আরেক শারির মধ্যবর্তী দূরত্ব হবে ৩০ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার।পানি জমে না এমন উঁচু জমি নির্বাচন করুন মাটির আলগা ও বায়ুচরাচলযোগ্য হলে গাছের শিকড় ভালোভাবে বাড়ে এবং ফলন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়।
সঠিক ও নিদিষ্ট পরিমানে সার প্রয়োগ
স্ট্রবেরির ভালো ফলন পাওয়ার জন্য মাটি পরীক্ষা করে সার দেওয়া উত্তম। তবে প্রাথমিকভাবে প্রতি শতক জমিতে পচা গহবর বা কমপোস্ট ১০ থেকে ১৫ কেজি, ইউরিয়া ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম, টিএসপি ১৫০ থেকে 200 গ্রাম, এমওপি ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম দিতে হয়। এই সারগুলো চাষ দিয়ে ভালোভাবে মাটির সাথে মিশাতে হবে এবং সার দেওয়ার ৭ থেকে ১০ দিন পর চারা রোপন করতে হবে।
পরবর্তী ধাপ চারা রোপনের ২০ থেকে ২৫ দিন পর ইউরিয়া ৫ থেকে ৭ গ্রাম প্রতিটি গাছের গোড়ায় গলিয়ে দিতে হবে। ফুল আসার সময় এমওপি এক চা চামচ করে দিতে হবে। ফল বড় করার সময় ইউরিয়া ও এমওপি এক চা চামচ করে দিতে হবে। সঠিকভাবে স্যারের প্রয়োগ ও পরিচর্যা আপনার ফলন বৃদ্ধিতে অধিক সহায়তা করবে।
চারা রোপণের সঠিক নিময় ও সময়
শীতের মৌসুম বাংলাদেশে স্ট্রবেরি চারা রোপনের সঠিক সময়। তবে চারা রোপনের সঠিক সময় শীতের শুরুতে। যখন আবহাওয়া ঠান্ডা হতে থাকে কিন্তু অতিরিক্ত ঠান্ডা না আবার বেশি কুয়াশা পড়ে না এই সময় গাছের বৃদ্ধি অনেক বেশি হয়। চারা রোপনের উপযুক্ত সময় অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ। স্ট্রবেরি চারা রোপণের সময় এর দূরত্ব ৩০ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার রাখা প্রয়োজন।
স্ট্রবেরি চাষের জন্য দো-আঁশ ও বেলে-দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে ভালো।অধিক ফলন পাওয়ার জন্য মাটির PH ৫.৫ থেকে ৬.৫ এর মধ্যে রাখতে হবে। ভালোমতো পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে নইলে পানির চাপে গাছের শিকড় পচে যেতে পারে। জমি ভালোভাবে পরিষ্কার ও বিভিন্ন ধরনের আগাছা মুক্ত করতে হবে।
বেডের উচ্চতা সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার এবং প্রস্থ ১ থেকে ১.৫ ফুট রাখতে হবে। বেডের দূরত্ব ২০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার এবং এক শারি থেকে আরেক শারির মধ্যবর্তী দূরত্ব হবে ৩০ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার।পানি জমে না এমন উঁচু জমি নির্বাচন করুন মাটির আলগা ও বায়ুচরাচলযোগ্য হলে গাছের শিকড় ভালোভাবে বাড়ে এবং ফলন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়।
আরো পড়ূনঃ অনলাইন থেকে আনলিমিটেড টাকা ইনকাম
কতদিন পর পর সেচ দিতে হবে
স্ট্রবেরি গাছের সঠিক বৃদ্ধি ও তুলনামূলক ফলন পাওয়ার জন্য সেচ দেওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। রোপনের পর হালকা করে সেচ দিতে হয়। এই সেচ দেওয়ার প্রায় এক মাসের মাথায় প্রতি দুই থেকে তিন দিন অন্তর হালকা করে সেচ দিতে হবে। ফুল আসার সময় প্রতিদিন হালকা করে সেচ দিতে হবে যেন মাটির আদ্রতা ঠিক থাকে। পানির ঘাটতি হলে ফল ছোট হয় বা ফেটে যায় তাই সময় মতো সেচ দেওয়াটা খুবই জরুরী।
বৃষ্টির সময় সেচ বন্ধ রাখতে হবে কারণ অতিরিক্ত পানিতে গাছের শিকড় পৌঁছে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। স্ট্রবেরি গাছে মূলত তিনটি উপায়ে সেচ দেওয়া ভালো। ড্রিপ ইমিগ্রেশন প্রতিটি গাছের গোড়ায় ধীরে ধীরে পানি পড়ে পানি অপচয় হয় না গাছ ও ফল ভিজেনা তাই ছত্রাক খুব কম হয় এবং বাণিজ্যিক চাষে খুবই কার্যকর। হ্যান্ডসেট হাতে বা জব দিয়ে ক্লাসের গোড়ায় হালকা করে পানি দিন তবে খেয়াল রাখবেন পাতা ও ফলে না লাগে। মেলা শেষ এই শেষ পদ্ধতিতে মূলত বেডের মাঝখানে নালা দিয়ে পানি দিন সে পানি গাছের গোড়ায় সহজে পৌঁছে।
রানার/লতার ব্যবস্থাপনা ও পরিচর্যা
আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে রানার কি? আসলে স্ট্রবেরী গাছের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো রানার বা লতা। রানার হলো গাছ থেকে গাছ জন্মানোর প্রাকৃতিক মাধ্যম। কিন্তু এর একটি খারাপ দিক ও রয়েছে যেমন এটি অযত্নে গাছের শক্তি চুষে নিয়ে ফল কমিয়ে দিতে পারে। তাই সঠিক রানার ব্যবস্থাপনা জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
স্ট্রবেরি গাছের মূল গাছ থেকে একপ্রকার লতা বের হয় এ লতাগুলো মাটিতে ছুঁলে সেখানে নতুন গাছ জন্ম নেয় এগুলোকে বলা হয় রানার ভালতা রালে, এর সঠিক ব্যবস্থাপনা না করলে গাছের পুষ্টি চুষে নিয়ে ফল ছোট করে দেয় এবং ফলনের দিক দিয়ে অনেক বড় প্রভাব পড়ে। মুল গাছে যদি ফলন নিতে চান তাহলে প্রথম রানার দেখা দিলে কেটে ফেলুন। রানার মূলত গাছের পুষ্টি কমিয়ে দেয় তাই কেটে দিলে গাছের ফুল ফল ভালো থাকে।
প্রতি সপ্তাহ অন্তত একবার গাছ পর্যবেক্ষণ করে রানার কেটে ফেলা উচিত। আপনি যদি পরের বছরের জন্য চারা তৈরি করতে চান তাহলে এক থেকে দুইটি রানার রেখে বাকি সবগুলো কেটে ফেলুন। রানার মাটি স্পর্শ করলে আরেকটি নতুন গাছ গজিয়ে যায় আর এই নতুন গাছ রুপন এর উপযুক্ত সময় হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে। রোপনের ২০ থেকে ৩০ দিন পর রানার শুরু হয় তখনই রানার গুলো কেটে ফেলুন ফল আসার সময় সব রানার কেটে ফেলুন।
স্ট্রবেরি গাছের রোগ-বালাই ও প্রতিকার
তবে স্ট্রবেরি গাছ থেকে সঠিক ফলন পেতে হলে এর পরিচর্চা করাটা অনেক বেশি জরুরী। স্ট্রবেরি গাছের রোগবালায় ও পোকামাকড় একটি বড় সমস্যা এই সমস্যা বোঝে তৎক্ষণিক সমাধান না করলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে ফলনের দিক দিয়ে। স্ট্রবেরি গাছের মূল বা সাধারণ যে রোগটা হয়ে থাকে তা হচ্ছে পাতা ঝরানো। এর লক্ষণ পাতায় ছোট ছোট বাদামি ও কালো দাগ ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায় এবং ঝরে পড়ে।
আপনার ফসল আক্রান্ত হওয়ার পর প্রতি লিটার পানিতে ডাইথেম-৪৫ ২ গ্রাম মিশিয়ে ১০ দিন অন্তর স্প্রে করুন এবং আক্রান্ত পাতা গুলো তুলে ফেলুন। এর আরেকটি প্রধান রোগ হচ্ছে গোড়া পচা রোগ যার লক্ষণ গাছ হঠাৎ নয়ে পড়ে গোড়ার অংশ নরম হয়ে পচে যায়। এটিও মূলত সকল ছত্রাক জনিত রোগ। এর ব্যবস্থাপনা গ্রহণের জন্য মাটিকে জীবাণুমুক্ত করুন টাইকোডার্মা মিশিয়ে বা কপার অক্সিফোরাইট স্প্রে করুন। ফল পচা রোগের লক্ষণ ফলের গায়ে সাদা ও ধূসর ছত্রাক দেখা দেয় যা নরম হয়ে পচে যায়।
এ লক্ষণ দেখা দিলে রোগাক্রান্ত ফল তুলে ফেলুন, বাগানে বাতাস চলাচল উপযোগী করুন এবং রোভনাল বা সুইচ নামক ছত্রাক নাশক স্প্রে করুন। লালমাকর যার লক্ষণ পাতা সাদা সাদা দাগ পাতা কুঁচকে যায় এবং পাতার নিচে মাকড় দেখা যায়। এই লক্ষণ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে নিম বিচির নির্যাস ব্যবহার করুন এবং সাদা মাছির পাতা ঝরিয়ে দেয় এবং পাতায় ঢেউ হলুদ বর্ণ দেখা যায় যা গাছকে দুর্বল করে দেয় এটি প্রতিকারের জন্য এমিডাক্লোপিড ব্যবহার করতে পারেন।
অন্যান্য রকমের পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনা
জমিতে কোন প্রকার আগাছা থাকতে দেওয়া যাবে না আগাছা পুষ্টি কেড়ে নেয় এবং রোগ বালাইয়ের আশ্রয়স্থল বানিয়ে তোলে নিয়মিত নিরামি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। আগাছা পরিষ্কার থাকলে আপনার ফসলের উন্নতি হবে এবং ফলন বৃদ্ধি পাবে। আবার মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন এই পদ্ধতিতে গাছের গোড়ায় শুকনো ঘর পলিথিন পেপার বিছিয়ে দিতে হয় যা আগাছা জন্মাতে দেয় না এবং খুব কম পরিমানে জন্মায়।
মাটির আদ্রতা ও গুনাগুন ঠিক থাকে আবার ফসল মাটিতে স্পর্শ করলে পচে বা নষ্ট হয়ে যায় না। মাঝে মধ্যে মাটি আলগা করে দিতে হবে যেন শিকড় সঠিকভাবে শ্বাস নিতে পারে। ফুল আসার পরে যখন দেখা যায় একটি ডালে অতিরিক্ত ফুল হয়েছে তখন কিছু ছোট ছোট ফুল কেটে দিতে হয় এতে ফসল শক্ত হয়। নিয়মিত পর্যবেক্ষণ মানে গাছ নিয়মিত দেখে রাখতে হবে যেন সময়মতো সমস্যা ধরা পড়ে এবং গাছের সমাধান দিতে পারেন।
ফল ও চারা সংগ্রহের সঠিক উপায়
ফল সংগ্রহের আগে দেখতে হবে ফল পরিপক্ক হয়েছে কিনা যদি পরিপক্ক ফল না হয় তাহলে ফল তোলা যাবেনা আর যদি তুলেন তাহলে ফলনের দিক থেকে অনেক কম হয়। স্টবেরি ফল পুরোটা গারো লাল বা প্রজাতি ভেদে গোলাপি হয়ে গেলে বুঝতে হবে এটি সংগ্রহ যোগ্য। আবার ফলের আশেপাশে সবুজ বা সাদা অংশ দেখা দিলে বুঝতে হবে এখনো অপরিপক্ক। ফল সংগ্রহের জন্য দুইটি সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ভালো। ভোরবেলা বা সন্ধ্যার সময় ঠান্ডা অবস্থায় ফল সংগ্রহ করলে খুব ভালো হয়।
গরমে মধ্যে ফল সংগ্রহ করলে এ ফলগুলো বেশিদিন লাস্টিং করে না খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছে নষ্ট হয়ে যায়। ফল ঊঠানোর সময় টান দিয়ে না তুলে তার ডানা সহ তুলে ফেললে সংরক্ষণে ভালো থাকে এবং অনেকদিন সতেজ থাকে। সংরক্ষণের জন্য -৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হয়। সর্বোচ্চ তিন থেকে পাঁচ দিন রাখা যায়। স্ট্রবেরি গাছ থেকে নতুন চারা সংরক্ষণ করা হয় রানার নামক লতা থেকে একটি গাছ থেকে অনেকগুলো রানার বের হয় খেতে স্পর্শ করার সাথে সাথে সেখানে শেকড় দিতে শুরু করে।
যখন রানারের শিকড়সহ পাতা বের হয় তখন এটিকে মাটি থেকে তুলতে হয়। সাধারণত হওয়ার সময়ের পরে এপ্রিল থেকে মে মাস রানার বেড়ে ওঠে এই সময় উপযুক্ত চারাগুলো কেটে বা উঠিয়ে অন্য জায়গায় রোপণ করা যায়। তবে রোপনের আগে আপনাকে ভালো চারা নির্বাচন করতে হবে দেখবেন যে চারা গুলোতে সবুজ এবং তিন থেকে চারটি পাতা থাকে ও শক্তিশালী শিকড় গজানো ও মাটির সঙ্গে দৃঢ়ভাবে লেগে আছে এমন চারা নির্বাচন করতে হবে। চারা উঠানোর পর তাৎক্ষণিক রোপন করলে ভাল হয় কিন্তু প্রয়োজনে ২ থেকে ৩ দিন ঠান্ডা অবস্থায় রাখলে চারা ভালো থাকে।
স্ট্রবেরি চাষের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
বাংলাদেশের স্ট্রবেরির চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আবার স্ট্রবেরি চাষের নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে কৃষকদের জন্য। স্ট্রবেরি একটি জনপ্রিয় ও দামি ফল বাজারে এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে বিশেষ করে শহর অঞ্চলে এর চাহিদা দ্বিগুণ। স্ট্রবেরি এমন একটি ফল যা অল্প জমিতে চাষ করে অধিক মুনাফা লাভ করা যায়। কৃষক ও উদ্যোক্তাদের জন্য ভালো আয় করার সুযোগ কৃষিভিত্তিক ক্ষুদ্র খামারে উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে এই স্ট্রবেরি চাষের মাধ্যমে।
নতুন জাত ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে ১২ মাস উৎপাদন করা যায় এমন জাত উতভাবনে কাজ শুরু হয়েছে। স্ট্রবেরির চাষ যেমন লাভজনক তেমন আবার চ্যালেঞ্জেরও। স্ট্রবেরি একটি শীতকালীন ফসল এর ফলানোর জন্য জলবায়ু তাপমাত্রা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় স্ট্রবেরি ঠান্ডা অবস্থায় ফসল দেয় অনেক বেশি। বাংলাদেশের বিশ্ব মন্ডলে অবস্থান সব জায়গায় উপযুক্ত নয়। স্ট্রবেরি বিভিন্ন প্রকারের রোগ বালাই এর আক্রমণ হয় যা আপনাকে বুঝতে হবে এবং তাড়াতাড়ি তাৎক্ষণিক সেই রোগের ব্যবস্থা নিতে হবে নইলে অধিক আর্থিক ক্ষতি হতে পারে।
স্ট্রবেরি চাষের উপযুক্ত জমি হচ্ছে উচু জমি যেগুলোতে পানি নিষ্কাশন খুব সহজেই করা যায় পানি নিষ্কাশন করা স্ট্রবেরি চাষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে অতিরিক্ত পানির জন্য স্ট্রবেরিয়ের গাছ ও ফল নষ্ট হয়ে যায় তাই পানি নিষ্কাশন করাটা খুবই জরুরী একটা উপাদান। স্ট্রবেরি চাষ সাধারণ অন্য ফসলের মত নয় এটি চাষ করার জন্য আগে আপনাকে দক্ষ হতে হবে। বাংলাদেশে দেখা যায় দক্ষতার অভাবে অনেক উদ্যোক্তা তাদের প্রজেক্টের লস করে। তাই স্ট্রবেরি চাষের আগে সরকার ও কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিন এবং রোগমুক্ত উন্নত জাত ব্যবহার করুন।
আরো পড়ূনঃ ফেসবুকে প্রতিদিন 500টাকা আয়
লেখকের মন্তব্য
স্ট্রবেরির উচ্চ বাজার মূল্য বাড়ন্ত চাহিদা এবং অল্প জায়গায় চাষযোগ্য হওয়ায় এটি কৃষি খাতে নতুন একটি দিগন্ত উন্মোচন করেছে। অনেক নতুন নতুন উদ্যোক্তা সঠিক ট্রেনিং গ্রহণ করে এবং চাষীর সঠিক তথ্য নিয়ে স্ট্রবেরি চাষ করে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত লাভ করেছেন। স্ট্রবেরি চাষ করার আগে জলবায়ুর সমস্যা রোগবালায় এবং চারা সংকটের মতো বাধাগুলো মোকাবেলা করতে না পারলে চাষী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
তাই সরকার কৃষি বিভাগ এবং বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সমন্বিত উদ্যোগে প্রশিক্ষণ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্ট্রবেরি চাষ করুন। স্ট্রবেরি চাষ নতুন সম্ভাবনা দুয়ার খুলে দিয়েছে তেমনি এর কিছু চ্যালেঞ্জ ও আছে।তাই সঠিক ট্রেনিং গ্রহণ করে এগুলো মোকাবেলা করে আপনি হতে পারেন একজন সফল উদ্যোক্তা।
Ronginpata.com সাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।
comment url